পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ছয় বছরের শিশু স্বাধীন এখনো স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। কারণ, এখনও তাকে সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি তার বাবা। তাই সন্তানের পিতৃপরিচয় আদায়ে এখন শিশুপুত্র ও বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে পথে পথে ঘুরছেন অসহায় মা সুমী আক্তার।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কলাপাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সুমী আক্তার।
জনপ্রতিনিধি থেকে এলাকাবাসী- সবাই জানেন সুমী ও বশির হাওলাদারের দাম্পত্য জীবনের কথা। কিন্তু আইনি জটিলতা ও বশিরের আর্থিক দম্ভে সবাই এখন অসহায়। কেউ দাঁড়াচ্ছেন না সুমীর পাশে।
এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ হলেও, বশির সুমীকে মেনে না নেয়ায় এখনও স্বামীর বাড়ি যেতে পারেননি তিনি। সন্তান স্বাধীন বাবা বলে ডাকতে পারেনি বশিরকে।
তাই প্রশাসন ও মানবাধিকার পরিষদের কাছে আইনি সহায়তা চাইছেন সুমী। দাবি করেছেন স্ত্রীর অধিকার।
কলাপাড়ার খেপুপাড়া সিনিয়র মাদ্রাসায় সুমী যখন ফাজিলের (ডিগ্রি) ছাত্রী তখন টিয়াখালী ইউনিয়নের পশ্চিম বাদুরতলী গ্রামের তৎকালীন ইউপি মেম্বার বশির উদ্দিন হাওলাদারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তখন বশির তার প্রথম স্ত্রীর কথা গোপন রাখেন। সেই ঘরে তার দুটি সন্তান রয়েছে।
এক পর্যায়ে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি সুমীকে বিয়ে করেন এবং পৌর শহরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকেন।
সুমী বিয়ের বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে তারা প্রথমে মেনে নেননি। তবে পরে তার পরিবার বিয়েটি মেনে নেন। এরপর বশির প্রায়ই কলাপাড়ার বালিয়াতলী ইউনিয়নে তার শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যেতেন।
২০১৬ সালে সুমী যখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন বশিরের প্রথম স্ত্রীর খবর প্রকাশ পায়। এরপর বশির উদ্দিন সটকে পড়েন। সুমীকে স্ত্রী হিসেবে মানতে অস্বীকার করেন।
কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে সুমী আক্তার পটুয়াখালী নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা করেন।
সুমী বলেন, গত ছয় বছর ধরে ঘুমাতে পারছেন সন্তানের কি হবে এ চিন্তায়। তার লিভার ও কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না তার বাবা স্বাধীনকে মেনে না নেয়ায়। এখন মানুষ তার দিকে আঙ্গুল তুলছে। পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। এখন মৃত্যু ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না তিনি।
সুমী আক্তারের স্বজনরা বলেন, ছোট সন্তান নিয়ে সুমী এখন অসহায় জীবন যাপন করছেন। গত ছয় বছর ধরে স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে আদালত ও পথে পথে ঘুরছেন। তার কারণে এখন পরিবার প্রায় নিঃস্ব। ছোট স্বাধীন বাবা বাবা করলেও গত ছয় বছরে একদিনও তাকে দেখতে আসেননি বসির।
সুমী ও বশিরের বিয়ের বিষয়টি জানতেন টিয়াখালী ইউনিয়নের তৎকালীন ইউপি সদস্য ও বশিরের স্বজনরা।
তারা জানান, তাদের বিয়ের বিষয়টি নিয়ে পরিষদে একাধিক সালিশ বসেছিলো। সব প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বশির এই বিয়ে ও সন্তানকে মানতে অস্বীকার করেন।
আর বশিরের ভাতিজা জানান, তার চাচীকে নিয়ে বসির যখন কলাপাড়া পৌর শহরে ভাড়া বাসায় থাকতেন তখন অনেকদিন তিনি বাজার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে বাসায় পৌঁছে দিয়েছেন।
ছোট শিশু স্বাধীন এখনও কিছু না বুঝলেও বাবার অভাবটা ঠিকই বুঝতে পারছে। মায়ের মোবাইল থেকে বাবাকে ফোন করে সালামও দিয়েছিলো। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে লাইনটি কেটে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে বসির হাওলাদারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাই এ বিষয়ে কথা বলবেন না বলে সংযোগটি কেটে দেন।
নিজেকে অসহায় দাবি করে ছয় বছরের পুত্রসন্তানসহ নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনের সহায়তা চেয়েছেন সুমী আক্তার।