আবারও গৃহদ্বন্দের কবলে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদের দল- জাতীয় পার্টি। এরশাদের মৃত্যুর পর এই দলে বেশিরভাগ নেতাই একাট্টা হয়েছেন সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের আসনে জিএম কাদেরকে বসাতে।
তবে, দেবর-ভাবির এমন দ্বন্দ্বের কথা অস্বীকার করে দলের চেয়ারম্যান বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে অটুট থাকবে জাতীয় পার্টি।
জাতীয় পার্টি। সাবেক সেনা শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাত ধরে গড়ে ওঠা এই দলটি দৌর্দন্ড প্রতাপের সাথেই প্রায় ৯ বছর ক্ষমতায় ছিলো।
কিন্তু নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এরশাদ সরকারের পতনের পর বারবার ভাঙনের কবলে দলটি। কখনো নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব, কখনো নির্বাচন কেন্দ্রীক সমীকরণ নিয়ে সঙ্কট।
তবে দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের মনে করছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিই জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালি হতে দেয়নি।
এখন নতুন করে আবারও সঙ্কটে জাতীয় পার্টি। যার শুরু ৩০ আগস্ট। সেই দিন সংসদে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ২৬ নভেম্বর দলের সম্মেলনের দিন ঘোষণা করেন।
এরপরই দলটির ২৬ জনের মধ্যে ২৪ সংসদ সদস্য একজোট হয়ে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে রওশন এরশাদকে সরাতে স্পিকারকে চিঠি দেন।
রওশন এরশাদ দলের পরামর্শক হয়ে সম্মেলন ডাকতে পারেন না উল্লেখ করে প্রেসিডিয়ামের একটি অংশও রওশনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এখন স্পিকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে দল।
বুধবার বনানী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সেই কথাই জানান দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
তিনি বলেন, বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টি প্রধান পৃষ্ঠপোষক। সে হিসেবে তিনি পরামর্শ দিতে পারেন। কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া বা বাস্তবায়নের ব্যাপারে তার কোনো ক্ষমতা নেই।
কাদের বলেন, বেগম রওশান এরশাদের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে কেউ এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। যেমন নির্বাচন কমিশন কোন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে বেশ মাতামাতি শুরু করছে।
জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মনে হয়েছে, তিনি কারও কথায় বা চাপে কাউন্সিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ প্রায় এক বছর বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তিনি অবদান রাখতে পারছেন না।
তাই পার্টির সংসদীয় দল জাতীয় পার্টির ঐক্য রক্ষা ও পার্টিকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতে বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা না রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গেল এক বছরে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল অসুস্থ বিরোধীদলীয় নেতার কর্মকাণ্ড নিয়ে ভাবেনি। এখন দলের স্বার্থেই বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল তাদের সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে সংসদের স্পিকারকে জানিয়েছেন। এখন বিধি অনুযায়ী স্পিকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে জানান জি এম কাদের।
নির্বাচনী জোট গঠন বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে জোট গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তখনকার বাস্তবতা ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার কথা বিবেচনা করে জোট গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় পার্টি।
তবে এখন আমরা তিনশো আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। দলকে আরও শক্তিশালী করতে নিয়মিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি বলেও উল্লেখ করেন দলটির চেয়ারম্যান।