এ যেন অন্য এক শেখ হাসিনা, রাষ্ট্র পরিচালনার দৃঢ়তার আড়াল ভেদ করে বেরিয়ে আসা স্বজনহারা এক রাষ্ট্রনায়কের চেহারা। শোক দিবসের আলোচনা সভায় এমন আবেগঘন চরিত্রেই ধরা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করতে গিয়ে এক পর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মঞ্চে ডেকে নিলেন যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ ও ঢাকা (দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে। সেখানে দু’ভাইয়ের পরস্পরকে জড়িয়ে ধরার দৃশ্য উপস্থিত সবাইকে আবেগতাড়িত করেছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শোক দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সময় এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমাদের সাথে এখানে উপস্থিত আছে পরশ-তাপস। পরশ আসো, আয়। ও চুপ করে বসে আছে, ওকে নিয়ে আসো। আয় কাছে আয়।
এ সময় শেখ ফজলে শামস পরশ মঞ্চে উঠে তার ছোটভাই শেখ ফজলে নূর তাপসকে জড়িয়ে ধরলে এক আবেগঘন মুহূর্তের সূচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে ওরা বড় হয়ে গেছে। পাঁচ বছরের পরশ আর তিন বছরের তাপস, বাবা-মায়ের লাশ গুলি খেয়ে পড়ে আছে, দুইটা বাচ্চা পাশে গিয়ে চিৎকার করছে বাবা ওঠো-মা ওঠো বলে, কেউ সাড়া দেয়নি। আমার ফুপুর বাড়িতে আমার ফুপু গুলিবিদ্ধ, দুই ফুফাতো বোন গুলিবিদ্ধ। আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর স্ত্রী গুলিবিদ্ধ, তার ছেলে নিহত। শুধু তার মেয়ে আর আরেকটা ছেলে অক্ষত ছিল। কী নিষ্ঠুর নির্মম ঘটনা ঘটেছে আপনারা একবার শুধু চিন্তা করে দেখেন। আর সেই হত্যার পর বিচার চাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না আমাদের, মামলা করার অধিকার ছিল না। আমি আর রেহানা বিদেশে ছিলাম, সেজন্যই বোধহয় বেঁচে গিয়েছিলাম। আর এ বাঁচা যে কী দুঃসহ বাঁচা তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী উপস্থিত আছেন। অনেকেই আপনজন হারিয়েছেন। ১৫ আগস্টের এই যে একটা নিষ্ঠুর ঘটনা এ হত্যাযজ্ঞটি ছিলো ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। ১৬ তারিখ পর্যন্ত লাশ পড়ে ছিল ৩২ নম্বরে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে মানবাধিকার নিয়ে যারা তত্ত্ব জ্ঞান দেয়, যখন স্বজন হারানোর ঘটনা ঘটেছে তখন মানবাধিকারের কথা কী ভেবেছেন? সেই সময় মামলা করার অধিকারও ছিল না। দেশে গুম খুন শুরু করেছে জিয়াউর রহমান, ভোট কারচুপি শুরুও তার হাতে। জিয়াউর রহমানের আমলে যারা নিখোঁজ হন তাদের আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সরাসরি যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের ছাড়াও ১৫ আগস্টের খুনি, তাদের সন্তান-আপনজন আর কিছু অপরাধীরা বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব অপপ্রচারে মানুষ যেনো বিভ্রান্ত না হয় সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।