Sunday, December 10, 2023

সব রপ্তানি খাতে একই কর হার

তারিখ:

বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় (২০২২-২৩ অর্থবছর) বাজেটে বিনিয়োগকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে রপ্তানি খাতের কর বৈষম্য দূর করে একই হারে করারোপ করা হচ্ছে।

পাশাপাশি কোম্পানির করপোরেট কর হ্রাস, এক ব্যক্তির কোম্পানিতে কর ছাড়, স্টার্ট-আপ কোম্পানির কর হ্রাসের উদ্যোগ থাকছে। এছাড়াও উদীয়মান শিল্পকে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি চলমান সুবিধার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতে করপোরেট কর সাধারণ গার্মেন্টসের জন্য ১২ শতাংশ এবং সবুজ কারখানার জন্য ১০ শতাংশ। অথচ পশ্চাৎপদ শিল্প হিসাবে অ্যাক্সেসরিজ শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও তাদের নিয়মিত হারে (৩০ শতাংশ) আয়কর দিতে হয়। পাট, হিমায়িত মাছ, প্লাস্টিক, চামড়া খাতে বৈষম্য আছে।

আগামী বাজেটে রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণকে উৎসাহ দিতে সব ধরনের রপ্তানিমুখী শিল্পের করপোরেট কর তৈরি পোশাক শিল্পের মতো ধার্য করা হচ্ছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি নিুমুখী হবে। ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের পার্থক্য হ্রাস পাবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমপিএমইএ) সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের খান বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে অ্যাক্সেসরিজ শিল্প অবদার রাখলেও কর বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে আমরা কর হ্রাসের দাবি জানিয়ে আসছি। বাজেটে সব রপ্তানি খাতের কর সমান করলে তা বিনিয়োগকে আরও উৎসাহিত করবে।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, প্লাস্টিক শিল্পের করপোরেট কর কমলে তা বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

একজন উদ্যোক্তা দেশি হোক বা বিদেশি, বিনিয়োগের আগে সবাই ওই খাতের করপোরেট কর কত সেটি খোঁজ-খবর নেন। প্লাস্টিক খাতে উচ্চ কর হার থাকায় এ খাতে অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অনেকে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখায়নি। বাজেটে কর কমানো হলে এ খাতে নতুন বিনিয়োগ আসবে। পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে।

সূত্রগুলো বলছে, বর্তমান সরকার আইসিটি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্টার্ট-আপ উদ্যোগকে বাজেটে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হবে। বাজেটে স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল ব্যতীত অন্য সব ধরনের রিপোর্টিংয়ের বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্টার্ট-আপ কোম্পানির লোকসান ৯ বছর পর্যন্ত সমন্বয়ের প্রস্তাব থাকছে। এছাড়াও স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ব্যয়সংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার ও টার্নওভার কর দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ১০ শতাংশ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তা সারওয়ার কামাল বলেন, ব্যবসার শুরুতে স্টার্ট-আপ উদ্যোগকে টিকে থাকার সংগ্রাম করতে হয়। এর মধ্যেও ট্যাক্স-ভ্যাট সম্পর্কে সঠিকভাবে না জানায় অনেক প্রতিষ্ঠানকে হয়রানির শিকার হতে হয়। যদি বাজেটে স্টার্ট-আপদের রিটার্ন জমা ছাড়া রিপোর্টিংয়ের বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়, তাহলে উদ্যোক্তাদের জন্য অবশ্যই সেটা সুখবর। এর ফলে আরও অনেকেই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতে চাইবে।

এছাড়া বাজেটে মোটরগাড়ি উৎপাদন শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান ফ্রিজ, এসি, টিভি, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, মোবাইল সংযোজন, লিফট সংযোজন শিল্পে এ সুবিধা দেওয়া আছে। তবে ফ্রিজ উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হওয়ায় বাজেটে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে।

অন্যদিকে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে খেলাপি ঋণের ওপর করারোপ করা হচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ মওকুফ করলে তা করমুক্ত রয়েছে। বাজেটে ব্যক্তি করদাতা ছাড়া প্রতিষ্ঠানিক করদাতাদের খেলাপি ঋণ মওকুফ করা হলে তা করযোগ্য আয় হিসাবে গণ্য করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। মন্দ ঋণের প্রবণতা হ্রাস করতেই বাজেটে এ পদক্ষেপ থাকছে। এ বিধান কার্যকর হলে মওকুফ করা খেলাপি ঋণের ওপর প্রতিষ্ঠানকে করপোরেট কর দিতে হবে।

অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে না পেরে খেলাপি হলেন। বর্তমানে আয়কর রিটার্নে সেই ঋণের সুদকে ব্যয় হিসাবে দেখানোর সুযোগ রয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ সুযোগ আর থাকছে না। প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্যাংক খেলাপি ঋণ বা ঋণের সুদ মাফ করলেও সেই ঋণ বা সুদকে ব্যয়ের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের আয় হিসাবে গণ্য করা হবে। এবং সেই ঋণ বা সুদের ওপর করপোরেট কর দিতে হবে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, আয়ের ওপর কর আদায় করাই হচ্ছে আয়করের মূল নীতি। ব্যাংক ঋণ বা ঋণের সুদ মওকুফ করলে সেখান থেকে কর আদায় কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। এটি আয়করের মূলনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ ধরনের আইন করা হলে চাপে পড়ে হয়তো ব্যবসায়ীরা কর দেবেন। কিন্তু কর কমপ্লায়েন্স গড়ে উঠবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। যা ডিসেম্বরে ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। প্রকৃতপক্ষে গত দুই বছর করোনার কারণে ঋণ পরিশোধ না করলেও কাউকে খেলাপি করা হয়নি। এ বছর থেকে সেই সুবিধা তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে ঋণ বা ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে গ্রাহককে খেলাপি করা হচ্ছে। ঋণের কিস্তি ৬ মাস বকেয়া থাকলে ঋণকে খেলাপি করার নিয়ম রয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ