Sunday, December 3, 2023

বরিশালের ঘটনা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানের চেষ্টায় আ.লীগ

তারিখ:

বরিশালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসায় হামলার ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগে। ঘটনার সঙ্গে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দলটির নীতিনির্ধারকরা বিব্রত। তবে ওই ঘটনার পর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত’ উল্লেখ করায় ক্ষুব্ধও হয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তাঁরা বলছেন, এই ঘটনা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা যেত। তাঁরা এখন সেই চেষ্টাই করছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক।

এদিকে সদর উপজেলা ইউএনওর বাসভবনে হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। বুধবার রাতের ঘটনায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত’ উল্লেখ করে গ্রেপ্তারের দাবি তোলে সংগঠনটি। তারা এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হামলায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি ব্যক্ত করেছেন। তাঁর নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কাজ করছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আরো বলেন, এই ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। নিজ দলের হলেও কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। আমি মনে করি, ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সামান্য এই ঘটনা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেত।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে বলেছেন। তদন্ত হলে এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা বেরিয়ে আসবে। তখন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে নিরপরাধ কোনো নেতাকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা তিনি চান না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেছেন, বরিশালের এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যে ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এই ধরনের আচরণ চাকরিবিধির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ নিজেও হামলার শিকার হয়েছেন। একজন জনপ্রতিনিধিকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে বিষয়টি যেহেতু একজন সরকারি দলের জনপ্রতিনিধির সঙ্গে ঘটেছে, তাই এই সমস্যা দ্রুতই নিরসন করার তাগিদ রয়েছে। দল ও সরকারের হাইকমান্ডকে সংকট নিরসনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারের সভাপতিত্বে সংগঠনের কার্যনির্বাহী পরিষদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আইনের মাধ্যমেই দুর্বৃত্তদের মোকাবেলা করা হবে এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর দুর্বৃত্ত বাহিনী সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সমস্ত জেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। বরিশালের মেয়র, যাঁর অত্যাচারে সমগ্র বরিশালবাসী অতিষ্ঠ, সেই সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর হুকুমেই এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। অতএব, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অবিলম্বে তাঁর গ্রেপ্তার দাবি করছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে।’

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। অবশ্য তাদের বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের পর রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। সরকারি চাকরিতে থেকে এই ভাষায় কোনো সংগঠন বিজ্ঞপ্তি দিতে পারে কি না, উঠেছে সেই প্রশ্নও। এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য গতকাল শনিবার একাধিকবার ফোন করেও সংগঠনটির সভাপতি কবির বিন আনোয়ারকে পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠনটির একাধিক নেতা বলছেন, যাঁরা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে মনে করেন, তাঁদের জন্য এমন বিবৃতি দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। যাঁরা বিবৃতির সমালোচনা করছেন, তাঁরা বরিশালের প্রকৃত অবস্থা জানেন না।

জনপ্রিয় সংবাদ