Thursday, December 7, 2023

খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তির আগে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ কেন

তারিখ:

চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে খালেদা জিয়াকে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে—জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দেওয়া এই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। দলের নেতারা বলেছেন, এর মাধ্যমে আইনমন্ত্রী কী বোঝাতে চেয়েছেন? তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সুপ্রিম কোর্টেও ন্যায়বিচার পাবেন না?
বৃহস্পতিবার বিকেলে ধানমন্ডির বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে এই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক ওই সম্পাদক দাবি করেন, ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারা সম্পর্কে আইনমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য সঠিক নয়।

 

গত বুধবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে। আইন অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার আর কোনো পথ খোলা নেই।…দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার বাইরে আইনের অন্য কোনো বিধান দেখাতে পারলে আমি আইন পেশা ছেড়ে দেব।’

 

সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব উদ্দিন বলেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একজন ভালো আইনজীবী। তিনি আইন পেশা ছেড়ে চলে যাবেন, তা কেউ চায় না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় নিম্ন আদালত রায় দিয়েছেন। দেশের সব নিম্ন আদালত বাস্তবে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন কাজ করছে। সুপ্রিম কোর্টেও বিচারক নিয়োগের নীতিমালা নেই। সরকারদলীয় বিবেচনায় বিচারপতি নিয়োগ দেন। এই জন্য কি খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তির আগেই আইনমন্ত্রী তাঁকে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন?

 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন বলেন, ৪০১ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে সরকার যেকোনো সময় বিনা শর্তে বা দণ্ডিত ব্যক্তি যা মেনে নেয়, সেই শর্তে তার দণ্ড কার্যকরকরণ স্থগিত রাখতে বা সম্পূর্ণ দণ্ড বা দণ্ডের অংশবিশেষ মওকুফ করতে পারবেন। এই আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে, সরকার যেকোনো সময় বিনা শর্তে অথবা শর্ত সাপেক্ষে যেকোনো ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে পারে। খালেদা জিয়ার মুক্তির আদেশে সরকার দুটি শর্ত দিয়েছে। সরকার চাইলে আরও বেশি শর্ত দিতে পারত বা কোনো শর্ত না-ও দিতে পারত। অন্যদিকে জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্টস অনুযায়ী, সরকার ইচ্ছা করলে শর্ত প্রত্যাহার বা সংশোধন করার ক্ষমতা রাখে।

অর্থাৎ জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্টস অনুযায়ী, যে কর্তৃপক্ষ আদেশ দিয়েছে, সেই কর্তৃপক্ষ ওই আদেশ সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন করার ক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ সরকার চাইলে ৪০১ ধারা মোতাবেক খালেদা জিয়ার মুক্তির আদেশের শর্ত সংশোধন করতে পারে।

এর আগে দুপুরে এ বিষয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিক্রিয়া জানান দলের দপ্তরের চলতি দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ। তিনি বলেন, আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকারের ইচ্ছাকৃত প্রতিবন্ধকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আইনমন্ত্রী যা বলেছেন, তা তা ভ্রষ্টাচার ছাড়া কিছুই নয়।

জনপ্রিয় সংবাদ