প্রাত্যহিক জীবনের একটি অংশ জুড়েই থাকে ঘুম। জীবনে খাওয়া দাওয়ার যেমন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তেমনি রয়েছে ঘুমের প্রয়োজনও। একজন মানুষের সুস্থ থাকার জন্যে ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম সুস্থ থাকার পাশাপাশি শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ও বলয়। ঘুম শুধু শরীর নয়, মনের ও যত্ন নেয়। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোসহ রোগ থেকে সুস্থ করে তোলা কিংবা মানসিক বিষাদে পর্যাপ্ত ঘুম বুস্টারের কাজ করে।
একজন পূর্ণবয়ষ্ক মানুষের দিনে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমের দরকার। ঘুম সবার জন্যে প্রয়োজনীয় হলেও অনেকেই নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে পারেননা। কখনও কাজের চাপে, কখনো মানসিক বিষাদে, কখনও বা রাত জেগে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছে রাত। আর ঘুমের এই অবহেলাই মানুষের জন্যে হতে পারে ভয়াবহ ক্ষতির কারণ।
এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে কেন ঘুমাবেন? সহজ কথায় বলতে গেলে শরীর এবং মন ভালো রাখতে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি যা দরকার তা হলো পর্যাপ্ত ঘুম। একজন মানুষের ২৪ ঘণ্টায় ৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন, সেখানে আপনি ঘুমাচ্ছেন ৪-৫ ঘণ্টা। প্রথমদিকে হয়তো সমস্যা মনে হবে না, কিন্তু এটা যে ধীরে ধীরে আপনার ইমিউনিটি সিস্টেম ধ্বংস করে দেবে, আর তা আপনি টেরও পাবেন না। সাময়িক সমস্যার ক্ষেত্রে, অফিস, পড়াশোনা বা ঘরের কাজে অমনোযোগী মনোভাব, সব সময় বেশ অস্বস্তি অনুভব করা, কাজের স্পৃহা না থাকা, সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব, ক্ষুধামন্দা, দুর্বলতা অনুভব করবেন ঠিকমতো ঘুম না হলে।
এছাড়াও, খিটখিটে মেজাজ, কাজে কিংবা হিসেবে ভুল, হাত-পা কিংবা মাথা ব্যথা, পেশি এবং স্নায়বিক দুর্বলতা দেখা দেয়। আবার, এটি দীর্ঘকালীন প্রভাবের ক্ষেত্রে আপনার অনেক বড় সমস্যার কারণ হতে পারে। আবার হাই প্রেশার কিংবা লো প্রেশার, হাই বা লো ব্লাড সুগার, হরমোনাল সমস্যা থেকে শুরু করে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। আর যাদের ইতোমধ্যেই প্রেশারের সমস্যা রয়েছে তাদের এখনি বিষয়ে আরও সাবধান হওয়া জরুরি। ঘুম নিয়ে অবহেলা করা ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদের।
তাই পর্যাপ্ত ঘুমের জন্যে অবশ্যই কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। ঘুমের জন্য নির্দিষ্ট সময় ঠিক করা, ব্যায়াম করা, ধ্যান করা, ঘুমের সময় ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকা এরকম ছোটখাটো বিষয় মাথায় রাখা উচিৎ। এছাড়া যারা ঘুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুমাতে পারেন না তাদের জন্যে করণীয় কিছু বিষয় রয়েছে যা নিয়মিত মেনে চললে ঘুমের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
ব্যায়াম করুন:
সকালে ঘুম থেকে উঠে কিংবা সন্ধ্যায়, দিনের বেলা কাজের ফাঁকে হালকা ইয়োগা করতে পারেন। এতে শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হবে। সাথে দেহে অক্সিজেন সরবরাহও হয় পরিমিত পরিমাণে। ঘুম ভালো হতে সকালে একটু হাঁটাচলা এবং সন্ধ্যায় কিছু সময় ইয়োগার পরামর্শও দেন বিশেষজ্ঞরা। আবার, ছোটখাটো শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামও ঘুমের জন্য বেশ কার্যকর।
ঘুমের পরিবেশ:
ভালো ঘুমের জন্যে এর পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। এই যেমন ঘুমানোর রুমে প্রচুর শব্দ কিংবা রুমটিতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নেই কিংবা অক্সিজেন সরবরাহ কম। এটা ভালো ঘুমের জন্যে অবশ্যই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এমনকি, ঘুমানোর বিছানা, বালিশ যদি অতিরিক্ত শক্ত হয়, তাহলেও আপনি ঘুমাতে পারবেন না। তাই রুমটি এমন হওয়া উচিৎ যেন সেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের সরবরাহ থাকবে। ঘুমানোর সময় পর্দা টেনে কিংবা রুমের লাইট অফ করে ঘুমাবেন অবশ্যই। মাথায় রাখুন, ঘর গুমোট গন্ধ বা দম বন্ধ পরিবেশ থাকবে না, অতিরিক্ত শব্দ আসা যাবে না এবং বিছানা ও বালিশ হতে হবে আরামদায়ক। সব উপাদান একসাথে মেলানো না গেলেও চেষ্টা করুন আদর্শ রুমে ঘুমাতে। এতে দেহ এবং মন ভালো থাকবে।
ঘুমের রুটিন:
এই যুগের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সারা রাত জেগে দিনে ঘুমানো। অনেকে কাজের জন্য জাগেন, কিন্তু শুধু গেম খেলা বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় পার বা মুভি দেখার জন্য কখনোই জেগে থাকা উচিৎ নয়, এতে স্বাস্থ্যের ভয়াবহ ক্ষতি হয়। এছাড়া, ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন কিংবা চা পরিহার করা উচিৎ। অতিরিক্ত ভারী কিংবা খসখসে পোশাক পড়া কিংবা খসখসে চাদরের বিছানায় ঘুমানো উচিত না। ঘুমের সময় এবং কিছু সময় আগে থেকে মোবাইলসহ সব ধরনের ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত।
সুস্থ থাকতে ঘুম অবশ্যই জরুরি তবে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কোনো কিছুই ভালো না। তেমনি ঘুমও। তাই অবশ্যই পরিমিত সময় ঘুমানো প্রয়োজন। অতিরিক্ত ঘুম শরীরের ক্ষতিও করে দিতে পারে।